বিজয় দিবসের ভোর থেকেই ফুলে ফুলে ভরে উঠছে খুলনার গল্লামারী স্মৃতিসৌধ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ফুল নিয়ে ছুটে যান জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে।
সবার প্রথমে স্মৃতি শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক। এরপর খুলনার বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, কেসিসির কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা জানান।
এর আগে প্রত্যুষে বয়রাস্থ মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানে সঠিক মাপ ও রঙের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
আজ দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। সকাল ৯টায় বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। একই স্থানে দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) আয়োজন করা হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।
নৌ-বাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের দর্শনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে বেলা ২টা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উম্মুক্ত রাখা হবে। রেল স্টেশন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট, ও লঞ্চ ঘাটে রেল, স্টিমার, লঞ্চ ও জাহাজ সজ্জিত করা হবে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ এবং বিভিন্ন স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন রঙিন নিশান দ্বারা সজ্জিত করা হবে।
১৬ ডিসেম্বর সুবিধাজনক সময়ে জেলা ও উপজেলা সদরে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান, টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, নৌকা বাইচ, ফুটবল ও হাডুডু খেলার আয়োজন করা হবে। সুবিধাজনক সময়ে শহিদ হাদিস পার্ক, শিববাড়ি মোড়, দৌলতপুর শহিদ মিনারসহ উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা টিকিটে সিনেমা হলসমূহে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।
শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদযোহর বা সুবিধাজনক সময়ে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। বাদ জোহর হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, ডে-কেয়ার, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গিলাতলা শিশুপার্ক, খুলনা রিভারভিউ পার্ক, বয়রা শিশুপার্ক, লিনিয়ার শিশুপার্ক ও খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্কসহ সকল পার্ক বিনাটিকেটে শিশুদের জন্য উম্মুক্ত রাখা এবং পর্যটন কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর ও ফুলতলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত রাখা হবে।
১৬ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে কেসিসি বনাম জেলা প্রশাসন একাদশের মধ্যে প্রদর্শনী ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সুবিধাজনক সময়ে শিশু একাডেমি শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সুবিধাজনক সময়ে পূর্ব রূপসাঘাটে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের মাজার প্রাঙ্গণে তাঁর বীরত্ব ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য-সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসভিত্তিক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
খুলনা গেজেট/হিমালয়